জল সম্পর্কিত কিছু আলোচনা ও উদ্বিগ্নতা


ভারতে আজও অসংখ্য গ্রাম আছে যেখানে তীব্র জল সংঙ্কট। এখনো দেশের বহু গ্রামে পানীয় জল পৌঁছায় না। - ভরসা নলকুপ, অগভীর নলকুপ। অতএব আর্সেনিক দূষণের প্রবল সম্ভাবনা। অন্য দিকে লাগামছাড়া কীটনাশকের ব্যাবহার, জলের সব উত্সই কম বেশি দূষিত হয়ে পড়ে

এদেশে বিশুদ্ধ পানীয় জল আজ দুর্লভ হয়ে উঠেছে। অথচ বিশুদ্ধ জল স্বাস্থ্যের প্রাথমিক শর্ত। আলোচনার আগে আমাদের জলের চাহিদা ও বণ্টন সম্পর্কে কিছুটা ধ্যান ধারণা করে নিতে চাই।

ভারতে প্রাপ্তিসাধ্য টাটকা জলের পরিমাণ -

- বাত্সরিক বৃষ্টিপাতের পররিমাণ- 400 মিলিয়ন হেক্টর মিটার।
- ভূপৃষ্ঠের জলের উত্স হিসেবে সঞ্চিত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ- 187 মিলিয়ণ হেক্টর মিটার।
- ভূগর্ভস্ত জলের উত্স হিসেবে সঞ্চিত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ- 43 মিলিয়ন হেক্টর মিটার।

এই হিসেবে সময়ের সাথে, লোকসংখ্যার প্রেক্ষাপটে গ্রহণযোগ্য জলের পরিমাণ কিভাবে আমরা পেয়ে থাকি এবং ভবিষ্যতে পাবো তার একটি ধারণা দিচ্ছি।

1987 সালে বছরে প্রতিজনে 5600 কিউবিক মিটার
2001 সালে বছরে প্রতিজনে 1840 কিউবিক মিটার
2007 সালে বছরে প্রতিজনে 1670 কিউবিক মিটার
2025 সালে বছরে প্রতিজনে 1330 কিউবিক মিটার
2050 সালে বছরে প্রতিজনে 1040 কিউবিক মিটার

ভারতে 85 শতাংশ জল ব্যবহৃত হয় চাষবাসের জন্য, 10 শতাংশ কল-কালখানার জন্য ও 5 শতাংশ গৃহস্থালীর কাজে।সাধারণভাবে জলের উত্স –

ভূ-পৃষ্ঠের ক্ষেত্রেঃ


- নদী ( River )
- জলস্রোত ( Stream )
- হ্রদ ( Lake )
- পুকুর ( Pond )

ভূ-গর্ভস্থের ক্ষেত্রেঃ


- ঝরণার জল ( Spring Water )
- অগভীর কূপ ( Shallow Wells )
- গভীর কূপ ( Deep Wells )

বৃষ্টির জলঃ-


এর মধ্যে আমরা 80 শতাংশ সময়ে, ভূগর্ভস্থ জলের ওপর পানীয় জল ও অন্যান্য কাজের জন্য নির্ভরশীল থাকি । আমাদের আলোচনা গ্রামীণ অঞ্চলে জল সরবরাহ এবং গ্রামাঞ্চলে জলজনিত সমস্যা নিয়ে । প্রথমতঃ ভারত সরকারের রুরাল ডেভেলপণ্টের তরফে গ্রামীণ অঞ্চলে জল সরবরাহের একটা নিয়ম আছে । অর্থাত বাড়িতে যদি সরাসরি পরিশ্রুতি জল সরবরাহ করা হয় তার পরিমাণ প্রতিদিনে প্রতিজনে 70 লিটার এবং রাস্তার ধারের কলের মাধ্যমে বা টিউবওয়েলের মাধ্যমে 80 লিটার ( যদি সম্ভব হয় 55 লিটারও দেওয়া যেতে পারে )। এই জলের মধ্যে প্রতিদিন প্রতিজনে, পানীয় জল 5 লিটার, রান্নার কাজে 5 লিটার, শৌচকার্যে 10-15 লিটার, স্নানের জন্য 15-20 লিটার, বাসনপত্র ধোওয়া, কাপড়া কাচা ইত্যাদির জন্য সব মিলিয়ে 7-12 লিটার এবং বাড়িতে সরাসরি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলে ফ্লাসিং-এর জন্য 15 লিটার। নিরাপদ পানীয় অর্থাত পেয় জলের কিছু শর্ত আছে, যেমন জলকে হতে হবে -

- রোগবহনকারী জীব মুক্ত ( Free from pathogenic organism )
- পরিষ্কার ( কর্দমাক্ত বা ঘোলাটে নয় )
- লবণাক্ত নয়
- বদ-আস্বাদন / গন্ধ মুক্ত
- বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান যা জলের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে মারাত্মক রোগের সৃষ্টি হয় তা থেকে মুক্ত হতে হবে।
- কম লৌহ যুক্ত, কম ক্ষার যুক্ত জল
- স্বাদু জল।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীতে 18 লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে দূষিত জল, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে। গ্রামীণ এলাকায় শতকরা 60-65 ভাগ রোগের কারণই অপর্যাপ্ত ও দূষিত জলের ব্যবহার, মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগ এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ।

যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পানীয় জল সরবরাহ করা হয় নদী, গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকেই যার সিংহভাগই নিরাপদ নয়। কোনো কোনো ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক, ফ্লুরাইডের ও কীটনাশকের মতো বিষাক্ত পদার্থও মিশে থাকে। এছাড়াও বেশির ভাগ নলকূপে প্রচুর পরিমাণ আয়রণ থাকে, থাকে অন্যান্য ধাতব পদার্থও। এসব পানীয় হিসেবে অতি-নিকৃষ্ট ধরনের তবুও বাধ্য হয়ে পান করতে হয়। ফলে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে রোগের উত্পাত ও প্রকোপ। প্রতিরোধে অক্ষম মানুষের মৃত্যু ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। অনিরাপদ পানীয় জল ব্যবহার, অশুচিতা এবং অস্বাস্থ্যকর ব্যবস্থার দরুন নিম্নলিখিত রোগের প্রাদুর্ভাব ক্রমাগত বেড়েই চলেছে. যেমন-

- আমাশয়, উদরাময়, অতিসার, কলেরা, আন্ত্রিক, টাইফয়েড প্রভৃতি।
- সংক্রামিত হেপাটাইটিস বা জণ্ডিস এবং পলিওমাইলাটিস।
- ক্রিমি সংক্রমণ ও রোগ।
- জলজ কীট পতঙ্গ দ্বারা সঞ্চারিত রোগ যথা- ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু প্রভৃতি।
- চর্ম ও চক্ষুর রোগ, যথা – ট্রাকোমা, টাইফাম প্রভৃতি।

বিশুদ্ধ জলের জন্য মাত্রা আছে তা পূরণ করতে হবে কারণ বিশুদ্ধ জল যে একটা দেশের জনস্বাস্থ্যের উন্নতিতে মস্ত বড় সহায়িকা। এ নিয়ে মানব সমাজে সংশয়ের কোন অবকাশ নেই।

ভারতে আজও অসংখ্য গ্রাম আছে যেখানে তীব্র জল সংঙ্কট। এখনো দেশের বহু গ্রামে পানীয় জল পৌঁছায় না। - ভরসা নলকুপ, অগভীর নলকুপ। অতএব আর্সেনিক দূষণের প্রবল সম্ভাবনা। অন্য দিকে লাগামছাড়া কীটনাশকের ব্যাবহার, জলের সব উত্সই কম বেশি দূষিত হয়ে পড়ে।

বিশুদ্ধ জলের জন্য ভারতীয় মানসূচক মান পালন করায় আন্তরিকতা দরকার। কমপক্ষে নিম্নোক্ত জলের মান বজায় রাখা জরুরী, শুধু গ্রামাঞ্চলেই নয় – শহরেও।

জলের মান এবং তাতে জীবানু, রাসায়নিক পদার্থের মাত্রা সম্পর্কে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন কারণ তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে জনস্বাস্থ্য। জলবন্টন ব্যবস্থা, জল পরিশোধনের সুব্যবস্থা বৈজ্ঞানিক প্রমানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে পরিচালনাকরণেই নিরাপদ পানীয় জল আমরা পেতে পারি।

ভূপৃষ্ঠের জলের ঘোলাটে ভাব দূরীভূত করার জন্য ফটকিরি জাতীয় কেমিক্যালস, রোগজীবানু মারার জন্য ক্লোরিন জাতীয় জীবানু নাশক পদার্থ, ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক / ফ্লুরাইড থাকলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার, করে নিরাপদ পানীয় জল প্রস্তুত করা হয়। তা বন্টনের মাধ্যমে যথাযথ জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার সময় পথে ও ব্যবহার করার জায়গায় প্রচুর পরিমাণে জল নষ্ট হয় এবং সচেতনতার অভাবে দামি জল নষ্ট হতে থাকে। এটাও বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা আছে। সমীক্ষা অনুযায়ী কমপক্ষে 40 শতাংশ জল এভাবে নষ্ট হয়ে থাকে। যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের জল আমরা নি:শুল্কে পেয়ে থাকি, জল অপচয় করতে বা হতে দেখলে আমরা নির্বিকার থাকি।

আমাদের এটা জানা দরকার যে ভবিষ্যতে পারমানবিক বা রাসায়নিক যুদ্ধের সম্ভাবনা কম, যুদ্ধ হবে জলের জন্য। স্বভাবতই জল অপচয় বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি সে শহরেই হোক বা গ্রামাঞ্চলেই হোক।

 

 

বৈশিষ্ট্য-উপাদান

অত্যাবশ্যক

( Desirable in mg/l )

একক মিঃ গ্রাঃ প্রতি লিটারে

কাম্য

( Permissible in mg/l )

একক মিঃ গ্রাঃ প্রতি লিটারে

কর্দমাক্ত ( Turbidity, NTU )

1

5

২.

 

পি এইচ ( PH )

6.5-8.5

কোনো শিথিলতা নয়

(No relaxation) 1.0

৩.

লোহা ( Fe হিসাবে )

0.3

600

৪.

মোটা ক্ষরতা ( CaCo3 হিসেবে )

300

1000

৫.

ক্লোরাইড ( CI )

250

1.5

৬.

ফ্লুরাইড ( F হিসেবে )

1.0

0.05

৭.

আর্সেনিক ( As হিসেবে )

0.01

0.02

৮.

পরিশোধিত জল মুক্ত ক্লোরিন

(ন্যূনতম মাত্রা Cl হিসেব)

মোট কলির্ফম (চৌঠাল কাউণ্ট, TC)

0.2

10 / 100 মিলি  মিটার

 

सम्पर्क


ডঃ অরুণকান্তি বিশ্বাস
প্রাক্তন পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা ও ডেপুটি ডাইরেক্টর, ন্যাশানাল এনভায়রনমেণ্টাল ইঞ্জিনীয়ারিং রির্সাচ অনস্টিটিউট (নিরী), কলকাতা


Posted by
Get the latest news on water, straight to your inbox
Subscribe Now
Continue reading